কবিতায় কার চরিত্র কী তা জেনে নেই:
- লক্ষ্মণ = কীট, তস্কর, চন্ডাল, বনবাসী, দম্ভা, দুবাচার দৈত্য
- রাবন = রক্ষো:শ্রেষ্ঠ
- রাম = অধম, রাঘব
- কুম্ভকর্ণ = শূলিশম্ভুনিভ
- মেঘনাদ = অরিন্ম, ধীমান, বাসবত্রাস, বাসববিজয়ী, রাবন আত্নজ, বীরেন্দ্রবলি, রাবণি, পরাত্রম দাস
- বিভীষণ = রক্ষোরথী, রক্ষোবর, বিধাতা, প্রভূ, ধর্মপথগামী, রক্ষোমনী
নিচে কবিতার ব্যাখ্যা করা হলো:-
"এতক্ষণে"- অরিন্দম কহিলা বিষাদে,
"জানিনু কেমনে আসি লক্ষ্মণ পশিল
রক্ষপুরে! হায়, তাত, উচিত কি তব এ কাজ?
ব্যাখা:- এখানে অরিন্দম হল মেঘনাদ। সে বিষাদের সুরে বলছে, যে সে বুঝতে পেরেছে, কিভাবে লক্ষণ এসে প্রবেশ করল এ যজ্ঞাগারে। হায় চাচা, এই কাজটা করা কি তোমার উচিত হয়েছে?
নিকষা সতী তোমার জননী!
সহোদর রক্ষ:শ্রেষ্ঠ!
শূলিশম্ভুনিভ কুম্ভকর্ণ!
ভ্রাতৃপুত্র বাসববিজয়ী!
ব্যাখা: এখানে "নিকষা" হল বিভীষণের মা।
সহোদর বলতে রাবণ কে বুঝানো হয়েছে, এবং তাকে রক্ষকুলের বীর বলা হয়েছে
শূলিশম্ভুনিভ- মানে মহাদেবের মত। কুম্ভকর্ণ রাবণের ভাই। তাকে শিব বা মহাদেবের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
ভ্রাতৃপুত্র বাসববিজয়ী- মেঘনাদ নিজেকেই বুঝিয়েছে এ লাইনটি দ্বারা। অর্থাৎ, সে দেবতা ইন্দ্রকেও পরাজিত করেছে।
নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে?
চন্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে?
কিন্তু নাহি গঞ্জি তোমা, গুরু জন তুমি
ব্যাখা:- হায় চাচা, নিজের ঘরের রাস্তা তুমি চোরকে দেখাচ্ছ! নিম্নশ্রেণির মানুষকে এনে রাজার সিংহাসনে বসাও! যাই হোক, আমি তোমায় তিরষ্কার করছিনা। কারণ তুমি আমার গুরুজন।
পিতৃতুল্য। ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে,
পাঠাইব রামানুজে শমন- ভবনে,
লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে
ব্যাখা:- হে চাচা, তুমি আমার বাবার সমান। দরজা ছেড়ে দাঁড়াও। আমি অস্ত্রাগার এ যাব। রামানুজ, মানে লক্ষ্মণকে আমি যমালয় এ পাঠাব (অর্থাৎ তাকে শেষ করে ফেলব)। আজ যুদ্ধ করে লঙ্কার কলঙ্ক দূর করব।
উত্তরিলা বিভীষণ, "বৃথা এ সাধনা,
ধীমান্। রাঘবদাস আমি; কী প্রকারে তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব, রক্ষিতে অনুরোধ?"
ব্যাখা:- বিভীষণ উত্তর দিল। হে জ্ঞানী, তুমি বৃথাই পরিশ্রম করছ। আমি হলাম রামচন্দ্রের দাস। আমি তোমার অনুরোধ রাখতে গিয়ে কিভাবে তার বিরুদ্ধে কাজ করব?
উত্তরিলা কাতরে রাবণি;-
"হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে!
রাঘবের দাস তুমি? কেমনে ও মুখে আনিলে এ কথা, তাত, কহ তা দাসেরে!"
ব্যাখা:- রাবণি, মানে রাবণের পুত্র মেঘনাদ উত্তর দিল। হে চাচা, তোমার কথা শুনে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। রামচন্দ্রের দাস তুমি!! কিভাবে ও মুখে তুমি এ কথা আনলে, হে চাচা, এই দাস/সেবক কে বুঝিয়ে বলো।
স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে;
পড়ি কি ভূতলে শশী যান গড়াগড়ি
ধূলায়? হে রক্ষোরথি, ভুলিলে কেমনে
কে তুমি? জনম তব কোন মহাকূলে?
ব্যাখা:- ঈশ্বর চাঁদকে আকাশের বুকে স্থির ভাবে স্থাপন করেছেন। সেটা কি কখনো আকাশ থেকে ছিটকে পড়ে ধূলায় গড়াগড়ি খায়? হে মহান বীর, তুমি কি করে ভুলে গেলে, কে তুমি? কোন মহান বংশে তোমার জন্ম! আর এই অধম রাম ই বা কে!?
স্বচ্ছ সরোবরে
করে কেলি রাজহংস
পঙ্কজ-কাননে যায় কি সে কভু, প্রভু, পঙ্কিল সলিলে,
শৈবালদলের ধাম?
ব্যাখা:- রাঁজহাস খেলা করে স্বচ্ছ, পরিষ্কার পানিযুক্ত সরোবরে (ছোট্ট পুকুর)। সেই রাঁজহাস কি কখনো প্যাক-কাদাযুক্ত কাননে বা বাগানে যায়? সে কি কখনো কাদাযুক্ত পানি বা শেওলাযুক্ত পানি তে খেলা করে?
মৃগেন্দ্র কেশরী,
কবে, হে বীরকেশরী,
সম্ভাষে শৃগালে মিত্রভাবে?
অজ্ঞ দাস, বিজ্ঞতম তুমি
অবিদিত নহে কিছু তোমার চরণে।
ব্যাখা:- মৃগেন্দ্র কেশরী (পশুরাজ সিংহ), কবে শৃগালকে আদর করে ডাকে? আমি অজ্ঞ, কিন্তু তুমি বিজ্ঞতম। তোমার এগুলা কিছুই অজানা নয়।
ক্ষুদ্রমতি নর, শূর, লক্ষ্মণ, নহিলে
অস্ত্রহীন যোধে কি সে সম্বোধে সংগ্রামে?
কহ, মহারথী, এ কি মহারথীপ্রথা?
নাহি শিশু লঙ্কাপুরে, শুনি না হাসিবে
এ কথা! ছাড়হ পথ; আসিব ফিরিয়া এখনি!
ব্যাখা:- লক্ষ্মণ হল সংকীর্ণচিত্তের অধিকারী। তা যদি নাই হত, তাহলে ও অস্ত্রহীন অবস্থায় কাউকে যুদ্ধের আহবান করত না। হে বীর যোদ্ধা, আপনিই বলুন, এটা কি কোনো বীর যোদ্ধার প্রথা? এ লঙ্কাপুরে ভাগ্যিস কোনো শিশু নেই। থাকলে এহেন কথা শুনে হাসত। পথ ছাড়ুন। এক্ষুণি ফিরে আসব।
দেখিব আজি, কোন দেববলে,
বিমুখে সমরে মোরে সৌমিত্রি কুমতি!
দেব-দৈত্য-নর-রণে, স্বচক্ষে দেখেছ,
রক্ষ:শ্রেষ্ঠ, পরাক্রম দাসের!
কী দেখি ডরিবে এ দাস হেন দূর্বল মানবে?
ব্যাখা:- আজ দেখেই ছাড়ব। কোন দৈবশক্তির জোরে আমার মোকাবিলা করে সৌমিত্রি (লক্ষ্মণ), মন্দবুদ্ধির অধিকারী। দেবতা, দৈত্য, মানুষ- সবাই আমাকে দেখেছে যুদ্ধক্ষেত্রে। কি দেখে আমি ভয় পাব, লক্ষণ এর মত একজন দূর্বল মানবকে?
নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রগলভে পশিল
দম্ভী; আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে।
তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে বনবাসী!
হে বিধাত:, নন্দন-কাননে ভ্রমে দুরাচার দৈত্য?
প্রফুল্ল কমলে কীটবাস?
ব্যাখা:- কোন ভয়ডর ছাড়া লক্ষ্মণ প্রবেশ করেছে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে। হে চাচা, আমায় আজ্ঞা করুন, এই নরাধমকে শাস্তি দেই। চাচা, আপনার জন্মভূমিতে বনবাসীরা পদার্পন করেছে। হে ঈশ্বর! স্বর্গের বাগান এর মত সুন্দর এ লঙ্কাপুরীতে দুরাচার দৈত্যদের আগমন হয়েছে। এ যেন সুন্দর পদ্মফুলে পোকা/কীট বাসা বেধেছে।
কহ তাত, সহিব কেমনে?
হেন অপমান আমি,- ভ্রাতৃ-পুত্র তব?
তুমিও, হে রক্ষোমণি, সহিছ কেমনে?"
মহামন্ত্র-বলে যথা নম্রশির: ফণী,
মলিনবদন লাজে,
ব্যাখা:- হে চাচা, আমায় বলুন, এহেন অপমান আমি কি করে সইতে পারি? আপনার ভাইয়ের ছেলে হয়ে! আপনিই বা এসব কিভাবে সহ্য করছেন? মন্ত্রবলে বশীভুত হয়ে সাপ যেমন ফণা নামিয়ে রাখে লজ্জায়, আপনি তার মতই করছেন।
উত্তরিলা রথী
রাবণ-অনুজ, লক্ষি রাবণ-আত্মজে;
"নহি দোষী আমি, বৎস; বৃথা ভর্ৎস মোরে তুমি!
নিজ কর্ম-দোষে, হায়, মজাইলা
এ কনক-লঙ্কা রাজা, মজিলা আপনি!
ব্যাখা:- রথী (অর্থাৎ বিভীষণ) উত্তর দিল। হে বৎস, আমি দোষী নই। তুমি শুধু শুধুই আমায় তিরষ্কার করছ। নিজেদের কর্মদোষে এ সোনার মত লঙ্কারাজ্য হারাতে বসেছ। এখন নিজেদের ও ধ্বংসের দিকে ঠেলছ।
বিরত সতত পাপে দেবকুল;
এবে পাপপূর্ণ লঙ্কাপূরী;
প্রলয়ে যেমতি বসুধা
ডুবিছে লঙ্কা এ কালসলিলে!
রাঘবের পদাশ্রয়ে রক্ষার্থে আশ্রয়ী
তেঁই আমি। পরদোষে কে চাহে মজিতে?
ব্যাখা:- দেবকুল সর্বদা পাপকাজ থেকে বিরত থাকে। এ লঙ্কাপুরী পাপে পূর্ণ হয়েছে। প্রলয় সংঘটিত হলে পৃথিবী যেমন ডুবে যাবে, তেমনি লঙ্কা আজ ডুবতে বসেছে, পাপের ভারে।
রুষিলা বাসবত্রাস! গম্ভীরে যেমতি
নিশীথে অম্বরে মন্দ্রে জীমূতেন্দ্র কোপি,
কহিলা বীরেন্দ্র বলী, --
ব্যাখা:- মেঘনাদ, যে কিনা ইন্দ্রের ভয়ের কারণ, সে রাগে গর্জন দিয়ে উঠল। রাতের অন্ধকারে গম্ভীর আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে যেমন হঠাৎ সবাই আঁতকে উঠে, সেভাবেই গর্জন দিয়ে বীরেন্দ্র বলি (মেঘনাদ) বলতে লাগল......
"ধর্মপথগামী, হে রাক্ষসরাজানুজ, বিখ্যাত জগতে তুমি;-
কোন ধর্ম মতে, কহ দাসে, শুনি,
জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি,- এ সকলে দিলা জলাঞ্জলি?
শাস্ত্রে বলে, গুণবান্ যদি পরজন, গুণহীন স্বজন,
তথাপি নির্গুন স্বজন শ্রেয়:,
পর: পর: সদা!
ব্যাখা:- হে ধর্মের পথগামী রাক্ষস রাজার ছোট ভাই (অর্থাৎ রাবণের ছোট ভাই), তুমি এ জগতে বিখ্যাত। এ দাসকে একটু বুঝাও, কোন ধর্মমতে তুমি জ্ঞাতিত্ব (আত্মীয়তা), ভ্রাতৃত্ব (ভাইয়ের বন্ধন), জাতি (দেশের মানুষ) কে জলাঞ্জলি দিলে? শাস্ত্রে আছে, স্বজন যদি গুণহীন ও হয়, কিন্তু পর ব্যক্তি গুণবান হয়, তবুও গুণহীন আত্মীয়/স্বজন ই শ্রেয়। কেননা, পর সবসময় পর ই থাকে।
এ শিক্ষা, হে রক্ষোবর, কোথায় শিখিলে?
কিন্তু বৃথা গঞ্জি তোমা! হেন সহবাসে,
হে পিতৃব্য, বর্বরতা কেন না শিখিবে?
গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি।"
ব্যাখা:- এই শিক্ষা, হে রক্ষোকূলের বীর চাচা, কোথায় শিখলে? অবশ্য তোমায় তিরষ্কার করেও লাভ নেই। যাদের সাথে থাকো, তাদের সাথে এমন বর্বরতা কেন শিখবে না? যাদের গতি নীচ, তাদের মতি ও নীচ।
কবিতা সম্পর্কে কিছু কথা :
রামচন্দ্র আর রাবণের যুদ্ধের খবর তো সবাই জানো। হিন্দুধর্মীয় ধর্মগ্রন্থ "রামায়ন" এ এই যুদ্ধের কথা বর্ণিত আছে। যুদ্ধে রামচন্দ্রের জয়, এবং রাবণের পরাজয় হয়। কবিতাটি বোঝার আগে এর চরিত্র আর ব্যাকগ্রাউন্ড হিস্টোরি জানা খুব জরুরি।
রাবণ লঙ্কার রাজা। তিনি অন্যায় ভাবে রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতাকে অপহরণ করে লঙ্কায় নিয়ে যান।। রামচন্দ্র, তার ভাই লক্ষণ আর বানর সৈন্য নিয়ে লঙ্কায় হামলা করে। বিভীষণ ছিল রাবণের ভাই। তিনি তার ভাইয়ের করা অন্যায় মেনে নিতে পারেন নি। তাই তিনি রামচন্দ্রের দলে যোগ দেন।
যুদ্ধ চলতে থাকে দু'পক্ষে। রাবণের সকল পুত্র যখন একে একে যুদ্ধে মারা যেতে থাকে, তখন মেঘনাদ, রাবণের আরেক পুত্র, যুদ্ধে নামে।
শিবপুরাণ থেকে জানা যায়, মেঘনাদ দেবতা শিবের কৃপায় পরম পরাক্রমশালী হয়েছিলেন। তাকে হারানো খুবই কঠিন ছিল। তাকে হারানোর উপায় বলে দিল তারই চাচা বিভীষণ, অর্থাৎ রাবণের ভাই।
উপায়টি হল:
মেঘনাদ যুদ্ধে যাবার আগে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পুজো করে যায়, এই পুজো ভঙ্গ করলেই মেঘনাদকে হারানো সহজ।
এভাবে লক্ষ্মণ, তার সাথে বিভীষণকে নিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে হাজির হয়। সেখানেই মেঘনাদ অগ্নিদেবের পুজো করে। এক্ষেত্রে তারা মায়া দেবীর সহায়তা নেয়, এবং শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে যজ্ঞাগারে পৌঁছে। মেঘনাদ এর আর বুঝতে বাকি থাকে না, যে এই কাজ একমাত্র তার চাচার কাজ। লক্ষ্মণ তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তখন মেঘনাদ আর বিভীষণ, অর্থাৎ চাচা-ভাতিজার মধ্যে যে কাল্পনিক কথোপকথন হয়, সেটা নিয়েই কবিতা।
অত:পর মেঘনাদের মৃত্যু ঘটে। তিনি ছিলেন একজন বড় বীর। দেশপ্রেমিক। পিতাকে অনেক ভক্তি-শ্রদ্ধা করত। তাই, সীতাকে অপহরণ করে আনলেও তিনি নিজ দেশ আর পিতার পক্ষ নেন।
আলোচ্য কবিতায় সব কিছু দেশপ্রেম, জাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব এর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়েছে।
শব্দার্থ ও টীকা
- বিভীষণ – রাবণের কনিষ্ঠ সহোদর।
- অরিন্দম – অরি বা শত্র“কে দমন করে যে।
- পশিল – প্রবশে করল।
- রক্ষঃপুরে – রাক্ষসদের পুরী বা নগরে।
- তাত – পিতা।
- নিকষা – রাবণের মা।
- কুম্ভকর্ণ – রাবণের মধ্যম সহোদর।
- বাসববিজয়ী – দেবতাদের রাজা ইন্দ্র বা বাসবকে জয় করেছে যে,
- তস্কর – চোর।
- গঞ্জি – তিরস্কার কবি।
- ভঞ্জিব আহবে – যুদ্ধদ্বারা বিনষ্ট করব।
- আহবে – যুদ্ধে।
- ধীমান্ – ধীসম্পন্ন।
- রাঘব – রঘুবংশের শ্রেষ্ঠ সন্তান।
- রাঘবদাস – রামচন্দ্রের আজ্ঞাবহ।
- রাবণি – রাবণের পুত্র।
- স্থাপিলা বিধুরে বিধি
- স্থাণুর ললাটে – বিধাতা চাঁদকে আকাশে নিশ্চল করে স্থাপন করেছেন।
- বিধু – চাঁদ।
- রক্ষোরথি – রক্ষকুলের বীর।
- রথী – রথচালক।
- শৈবালদের ধাম – পুকুর।
- শৈবাল – শ্যাওলা।
- মৃগেন্দ্র – পশুরাজ সিংহ।
- কেশরী – কেশযুক্ত পশুরাজ সিংহ।
- মহারথি – মহাবীর।
- মহারথীপ্রথা – শ্রেষ্ঠ বীরদের আচরণ প্রথা ।
- সৌমিত্রি – লক্ষ¥ণ।
- নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার – লঙ্কাপুরীতে মেঘনাদের যজ্ঞস্থান।
- প্রগল্ভে – নির্ভীক চিত্তে।
- নন্দন কানন – স্বর্গের উদ্যান।
- মহামন্ত্র-বলে যথা
- নম্রশিরঃ ফণী – মন্ত্রপূত সাপ যেমন মাথা নত করে।
- লক্ষি – লক্ষ করে।
- ভর্ৎস – তিরস্কার করছ।
- মজাইলা – বিপদগ্রস্ত করলে।
- বসুধা – পৃথিবী।
- রুষিলা – রাগান্বিত হলো।
- মন্দ্র – শব্দ, ধ্বনি।
- জীমূতেন্দ্র – মেঘের ডাক বা আওয়াজ।
- জলাঞ্জলি – সস্পূর্ণ পরিত্যাগ।
- দুর্মতি – অসৎ বা মন্দ বুদ্ধি
কবিতার ছন্দ বিশ্লেষণ
- এতক্ষণে অরিন্দম / কহিলা বিষাদে (৮ + ৬)
- জানিনু কেমন আসি / ল²ণ পশিল ( ৮ + ৬)
- রক্ষপুরে! হায়, তাত / উচিত কি তব (৮ + ৬)
- এ কাজ? নিকষা সতী / তোমার জননী! (৮ + ৬)
জেনে রাখা দরকার
- ১. অরিন্দম-মেঘনাদের উপাধি।
- ২. রক্ষ:পুর বলতে বুঝানো হয়েছে-লঙ্কাপুরকে।
- ৩. মেঘনাদের রাজ্যের নাম-লঙ্কাপুর।
- ৪. মেঘনাদের বাবার নাম-রাবণ।
- ৫. মেঘনাদের চাচার নাম-বিভীষণ।
- ৬. রাবনের মায়ের নাম-নিকষা।
- ৭. রামানুজ হলো ল²ণ-(রামের ছোট ভাই)
- ৮. লক্ষণের মায়ের নাম সুমিত্রা।
- ৯. সৌমিত্রি বলতে বুঝানো হয়েছে-ল²ণকে।
- ১০. রাঘবদাস হল-বিভীষণ।
- ১১. প্রফুল কমলে বাস করে-কীট।
- ১২. রাবণ-অনুজ হল-বিভীষণ।
- ১৩. রাবণ আত্মজ হল-মেঘনাদ।
- ১৪. সর্বদা পাপ থেকে বিরত থাকে-দেবতারা।
- ১৫. বীরেন্দ্র বলী’ বলা হয়েছে- মেঘনাদকে।
- ১৬. রাক্ষসরাজ হল-রাবণ।
- ১৭. রাক্ষরাজানুজ হল-বিভীষণ।
- ১৮. জগতে বিখ্যাত-বিভীষণ
গুরুত্বপূর্ণ লাইন
- “এতক্ষণে”-অরিন্দম কহিলা বিষাদে।
- নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে?
- পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে,
- “হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে।
- আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে।
- প্রলয়ে যেমতি বসুধা, ডুবিছে লঙ্কা এ কালসলিলে!
- গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি।
গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (জ্ঞানমূলক)
- ১.‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতাটি নেয়া হয়েছে – মেঘনাবধ কাব্যের ৬ষ্ঠ সর্গ ‘বধো’ (বধ) থেকে।
- ২. মেঘনাদবধ কাব্যের মোট সর্গসংখ্যা – ৯টি।
- ৩. ভ্রাতা ক্ম্ভুকর্ণ ও জ্যেষ্ঠ পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পর রাবণ তার যুদ্ধের সেনাপতি করেন – কনিষ্ঠ পুত্র মেঘনাদকে।
- ৪. যুদ্ধজয় নিশ্চিত করার জন্য মেঘনাদ মনস্থির করল – নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে
- ৫. শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ল²ণ ফাঁকি দিয়ে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করতে সক্ষম হয় – মায়াদেবীর আনুকূল্যে।
- ৬. শত শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ল²ণ নিকুম্ভিরা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করতে সক্ষম হয় – রাবণের অনুজ বিভীষণের সহায়তায়।
- ৭. নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ল²ণ মেঘনাদের কাছে প্রার্থনা করে- যুদ্ধের।
- ৮. নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে মেঘনাদ ল²ণের কাছে প্রার্থনা করে- যুদ্ধসাজ গ্রহণ করতে সময় দেয়ার জন্য।
- ৯. নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারের প্রবেশদ্বারে মেঘনাদ দেখতে পায়- বিভীষণকে
- ১০. এ কবিতায় মাতৃভাষা প্রতি প্রকাশিত হয়েছে – ভালোবাসা।
- ১১. এ কবিতায় বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতার বিরুদ্ধে প্রকাশিত হয়েছে – ঘৃণা।
- ১২. এ কবিতায় জ্ঞাতিত্ব, ভাতৃত্ব ও জাতিসত্তার সংহতির বিরুদ্ধে পরিচালিত ষড়যন্ত্রকে অভিহিত করা হয়েছে – নীচতা ও বর্বরতা বলে।
- ১৩. রাম রাবণের যুদ্ধে স্বপক্ষ ত্যাগকারী – বিভীষণ।
- ১৪. ‘গঞ্জি’ শব্দের অর্থ – তিরষ্কার করি।
- ১৫. ‘নন্দন কানন’ শব্দের অর্থ – স্বর্গের উদ্যান।
- ১৬. ‘মজাইলা’ শব্দের অর্থ – বিপদগ্রস্ত করলে।
- ১৭. ‘বসুধা’ শব্দের অর্থ – পৃথিবী।
- ১৮. ‘তেঁই’ শব্দের অর্থ – তজ্জন্য/সেহেতু।
- ১৯. ‘মন্দ্র’ শব্দের অর্থ – শব্দ/ধ্বনি।
- ২০. ‘জীমৃতেন্দ্র’ শব্দের অর্থ – মেঘের ডাক বা আওয়াজ।
- ২১. ‘বলী’ শব্দের অর্থ – বলবান/ বীর।
- ২২. ‘জলাঞ্জলি’ শব্দের অর্থ – সম্পূর্ণ পরিত্যাগ।
- ২৩. ‘নীচ’ শব্দের অর্থ – হীন/নিকৃষ্ট/ ইতর।
- ২৪. ‘দুর্মতি’ শব্দের অর্থ – হীন/নিকৃষ্ট/ ইতর।
- ২৫. ‘পশিল’ শব্দের অর্থ – প্রবেশ করল।
- ২৬. শাস্ত্রমতে গুণহীন হলেও শ্রেয় – নির্গুণ স্বজন।
- ২৭. রথ চালনার মাধ্যমে যুদ্ধ করে যে তাকে বলে – রথী।
- ২৮. লঙ্কাপুরীতে মেঘনাদের যজ্ঞস্থানের নাম – নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার।
- ২৯. তাত শব্দের আক্ষরিক অর্থ – পিতা।
- ৩০. কবিতায় ‘তাত’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে- পিতৃব্য / চাচা অর্থে।
- ৩১. অরি বা শত্র“কে যে দমন করে তাকে বলা হয় – অরিন্দম।
- ৩২. মেঘনাদ লঙ্কাকে তুলনা করেছে – প্রফুল কমলের সাথে।
- ৩৩. মেঘনাদ লঙ্কায় ল²ণের প্রবেশকে তুলনা করেছে- প্রফুল কমলে কীটবাসের সাথে।
- ৩৪. ‘নহি দোষী আমি, বৎস ; বৃথা ভর্ৎস মোরে’- মেঘনাদের কথার প্রেক্ষিতে বিভীষণ একথাটি বলেছে – মলিনবদনে।
- ৩৫. ‘পরদোষে কে চাহে মজিতে?’- এখানে ‘পরদোষে’ দ্বারা বিভীষণ বুঝিয়েছে – রাবণের দোষের কথা।
- ৩৬. লঙ্কাপুরী পরিপূর্ণ – পাপ দ্বারা।
- ৩৭. বিভীষণের নিজ পক্ষ ত্যাগ করে রামের পক্ষ অবলম্বন করাকে মেঘনাদ আখ্যায়িত করেছে – বর্বরতা বলে।
- ৩৮. ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতাটিতে যতি চিহ্নের ব্যবহার হয়েছে-স্বাধীনভাবে/ বক্তব্যের অর্থের অনুষঙ্গে।
- ৩৯. ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কবিতাটি ছন্দের বিশেষ লক্ষণ – ভাব প্রকাশের প্রবহমানতা।
- ৪০. পিতৃব্যের ষড়যন্ত্রকে মেঘনাদ আখ্যায়িত করেছে – নীচতা ও বর্বরতা হিসেবে।
Tag:-