অধ্যায়টি শুরু করার পূর্বে প্রথমেই বলে নিচ্ছি এখানে শুধু আমি প্রথম অধ্যায়ের টপিকগুলো নিয়ে আলোচনা করা করেছি। এটি কোন বই নয়।
বিশ্বগ্রাম এর ধারনা:
বিশ্বগ্রাম হচ্ছে এমন একটি পরিবেশ যেখানে পৃথিবীর সকল মানুষ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত থাকতে পারবে। ফলে, এক অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলের মানুষদের সাহায্য করতে পারবে। কানাডিয়ান দার্শনিক হাবার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান (Harvard Marshall McLuhan) বিশ্বগ্রাম ধারণাটি প্রবর্তন করেন। তিনি ১৯৬২ সালে প্রকাশিত ‘The Gutenberg Galaxy: The Making of Typographic Man’ এবং ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত 'Understanding Media’ বই এ বিশ্বগ্রাম সম্পর্কে ধারণা দেন। মার্শাল ম্যাকলুহান কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিখ্যাত দার্শনিক ছিলেন।
বিশ্বগ্রামের সুবিধা
ইন্টারনেটের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে।
ঘরে বসেই উপার্জন করা সম্ভব হয়।
বিভিন্ন ধরনের সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
ভৌগলিক দূরত্ব কমে।
কাজের দক্ষতা ও গতি বৃদ্ধি পায়।
ব্যবসা-বানিজ্য, গবেষনা ও সংস্কৃতি বিনিময় সহজ হয়।
বিশ্বগ্রামের অসুবিধা
হ্যাকিং এর মাধ্যমে তথ্য চুরি হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
সাইবার ক্রাইমের মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়।
মিথ্যা খবর প্রচারের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়।
অটোমেশন সিস্টেম ব্যবহারের ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়।
বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার উপাদান সমূহ
হার্ডওয়্যার: বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার জন্য উপযুক্ত হার্ডওয়্যার খুবই জরুরী। কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, স্যাটেলাইট, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি যন্ত্রগুলো বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সফটওয়্যার: হা্র্ডওয়্যার পরিচলানার জন্য সফটওয়্যার প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম, ব্রাউজার ইত্যাদি বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কানেক্টিভিটি: বিশ্বগ্রামের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কানেক্টিভিটি হচ্ছে বিশ্বগ্রামের মেরুদণ্ড। কানেক্টিভিটি বলতে ইন্টারনেট সংযোগকে বুঝানো হয়। এ উপাদানের মাধ্যমেই ডেটা স্থানান্তর করা হয়।
ডেটা: তথ্যের ক্ষুদ্রতম একক হচ্ছে ডেটা। টেক্সট, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি ডেটার অন্তর্ভুক্ত। তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণ করার জন্য ডেটার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
সক্ষমতা: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্ব প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের জ্ঞান অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। বিশ্বগ্রামের প্রভাব কেমন হবে তা সক্ষমতা বা মানুষের জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল।
বিশ্বগ্রাম সংশ্লিষ্ট উপাদান:
যোগাযোগ
যোগাযোগ বিশ্বগ্রামের একটি অপরিহার্য সংশ্লিষ্ট উপাদান। কোন মাধ্যম দ্বারা এক পক্ষ থেকে অন্য পক্ষে যোগাযোগের প্রক্রিয়াকে কমিউনিকেশন বলে। এখানে বেশকিছু যোগাযোগের মাধ্যম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে:-
মোবাইল ফোন
মোবাইল অর্থ ভ্রাম্যমান বা স্থানান্তরযোগ্য। এটি সহজে যেকোনও স্থানে বহন করা এবং ব্যবহার করা যায় বলে মোবাইল ফোন নামকরণ করা হয়েছে। মোবাইল ফোনের জনক মার্টিন কুপার। শুধু কথা বলাই নয়, আধুনিক মোবাইল ফোন দিয়ে আরো অনেক সেবা গ্রহণ করা যায়। যেমন: টেক্সট মেসেজ, মাল্টিমিডিয়া মেসেজ, ই-মেইল, ইন্টারনেট, ওয়াইফাই, ব্লুটুথ, ক্যামেরা, গেমিং ইত্যাদি। যেসব মোবাইল ফোন এসব সেবা এবং কম্পিউটারের সাধারণ কিছু সুবিধা প্রদান করে, তাদেরকে স্মার্টফোন নামে ডাকা হয়। বাংলাদেশে মোবাইল ফোন প্রথম চালু হয় ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে।
ইন্টারনেট
ইন্টারনেট হল বিশ্বেজুড়ে বিস্তৃত, পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি যা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। ইন্টারনেট এ আইপি অ্যাড্রেস এর মাধ্যমে ডেটা আদান প্রদান করা হয়। বিশ্বে ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেট চালু হয়। ইন্টারনেটের জনক ভিনটন জি কার্ফ। বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশী ভূমিকা পালন করে ইন্টারনেট।
২০০০ সালে বাংলাদেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১,৮৬,০০০ যা ২০০৯ সালে বেড়ে হয় ৬,১৭,৩০০, যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার মাত্র ০.৪%। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬২% ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। ২০১৯ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী বেড়েছে ৯৩.৭০২ মিলিয়ন। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে বাংলাদেশ 4G নেটওয়ার্ক পরিষেবা প্রদান শুরু করে।
স্যাটেলাইট
স্যাটেলাইট শব্দের অর্থ কৃত্রিম উপগ্রহ। পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করে এমন বিশেষ ধরনের কৃত্রিম উপগ্রহ হচ্ছে স্যাটেলাইট। স্যাটেলাইট পুরো পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করতে ২৪ ঘন্টা সময় লাগে। স্যাটেলাইট পৃথিবী থেকে ৩৬,০০০ কিমি বা ২৩,০০০ মাইল দূরত্বে স্থাপন করা হয়। মোবাইলফোনের জিপিএস স্যাটেলাইটের সিগন্যাল ব্যবহার করে কাজ করে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ হল প্রথম বাংলাদেশী যোগাযোগ উপগ্রহ। এটি থ্যালস অ্যালেনিয়া স্পেস দ্বারা নির্মিত এবং ১১ মে, ২০১৮ এ চালু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্যাটেলাইটটির নামকরণ করা হয়েছে। একটি যোগাযোগ স্যাটেলাইট চালু করতে বাংলাদেশ ৫৭ তম দেশে পরিণত হয়েছে। উপগ্রহের মোট ব্যয় ছিল ২৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ বিদেশী উপগ্রহের উপর নির্ভরশীল ছিল। এতে প্রতিবছর প্রায় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হয়। এখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ চালু করে বাংলাদেশ খরচ বাঁচাতে পারে। বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ঘূর্ণিঝড় বা টর্নেডোর মতো দুর্যোগের সময় নিরবচ্ছিন্ন টেলিযোগাযোগ আনতে সহায়তা করবে।
ই-মেইল
ইলেক্ট্রনিক মেইলকে সংক্ষেপে ইমেইল বলে। রে টমলি সন ইমেইলের জনক। ইমেইল এর মাধ্যমে টেক্সট, ছবি, অডিও, ভিডিওসহ যেকোনো ধরনের ফাইল অতি দ্রুত পাঠানো যায়। একটি ইমেইলের ২টি অংশ থাকে। যেমন projuktilab@gmail.com হচ্ছে একটি ইমেইল অ্যাড্রেস। প্রথম অংশটি ব্যবহারকারীর পরিচিতি এবং দ্বিতীয় অংশটি ডোমেইন নেম। যেমন: projuktilab হচ্ছে ব্যবহারকারীর পরিচিতি এবং gmail.com হচ্ছে ডোমেইন নেম। কিছু জনপ্রিয় ইমেইল সেবাদানকারীর নাম: gmail.com, yahoo.com, hotmail.com
ইমেইল পাঠানোর জন্য একটি হার্ডওয়্যার (মোবাইল/কম্পিউটার), ইন্টারনেট সংযোগ এবং ইমেইল অ্যাড্রেস প্রয়োজন হয়।
ইমেইলের সুবিধা:- দ্রুত গতিতে ডেটা আদান প্রদান করা যায়, একইসাথে অনেক ব্যবহারকারীর কাছে বার্তা পাঠানো যায়, নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুব উন্নতমানের।
জিপিএস (GPS)
জিপিএস (GPS) এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Global Positioning System যার মাধ্যমে কোন স্থান নিখুঁতভাবে নির্ণয় করা সম্ভব। জিপিএস পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় নিমেষেই আমাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারে ও সঠিক গন্তব্যে পৌঁছার দিকনির্দেশনা দিতে পারে। জিপিএস কোনো নির্দিষ্ট স্থান নির্ণয়ের সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম। এটি মানচিত্র তৈরি, পঠন ও ব্যবস্থাপনার সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এছাড়াও, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের অক্ষাংশ, দ্রাঘিমাংশ, উচ্চতা, দূরত্ব প্রভৃতি নির্ণয় করা যায়।
রিজার্ভেশন সিস্টেম
ঘরে বসে ইলেক্ট্রনিক উপায়ে যানবাহনের টিকেট সংরক্ষণের প্রক্রিয়াকে রিজার্ভেশন সিস্টেম বলে। প্রচলিত পদ্ধতিতে কাগজে ছক কেটে আসন বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু দূর-দূরান্ত থেকে বরাদ্দ করার আসন ব্যবস্থা প্রচলিত পদ্ধতিতে থাকে না। রিজার্ভেশন সিস্টেমের মাধ্যমে দূর-দরান্ত থেকে আসন বরাদ্দ করা সম্ভব।
টেলিকনফারেন্সিং
ভৌগলিক দূরত্বে অবস্থান করে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াই হচ্ছে টেলিকনফারেন্সিং। ১৯৭৫ সালে মরি টারফ টেলিকনফারেন্সিং পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন। টেলিকনফারেন্সিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সেমিনার, সভা কিংবা দলবদ্ধভাবে যোগাযোগ করা যায়।
ভিডিও কনফারেন্সিং
ভিডিও কনফারেন্সিং হলো একটি অত্যাধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা যেখানে মনিটর বা পর্দায় অংশগ্রহণকারীরা সভায় অংশগ্রহণ করতে পারে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দূরবর্তী অবস্থান থেকে সভায় অংশগ্রহণ করতে পারে। ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে ডাক্তার-রোগী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ-জনগন, পরিবারের সদস্যগণ একে অপরের সাথে যুক্ত হতে পারেন। ভিডিও কনফারেন্সিং এর কিছু জনপ্রিয় সফটওয়্যারের নাম: Skype, Whatsapp, IMO, Messenger ইত্যাদি।
কর্মসংস্থান
ইন্টারনেট ব্যবহার করে কর্মসংস্থানের সুযোগকে আউটসোর্সিং বলা হয়। আউটসোর্সিং এর কয়েকটি জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেসের নাম: ওডেস্ক (বর্তমান: আপওয়ার্ক), ফ্রিল্যান্সার, ফাইভার, পিপল পার আওয়ার ইত্যাদি। যারা এসব মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন তাদের ফ্রিল্যান্সার বলে। অপরদিকে, যারা মার্কেটপ্লেস এ কাজ দেয় তাদের বায়ার বলে। ফ্রিল্যান্সাররা নির্দিষ্ট শ্রম ঘন্টায় কাজ করে থাকে।
উদাহরণ: আরিফের একটি ওয়েবসাইট প্রয়োজন। সে জানে না কিভাবে ওয়েবসাইট তৈরি করতে হয় কিংবা সে নিজের কাজ নিজে করতে আগ্রহী নয়। তাই, সে চিন্তা করলো কাউকে দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করানোর। তারপর, সে একটি স্থানে ঘোষনা দিল যে, তার একটি ওয়েবসাইট প্রয়োজন। রাকিব নামের একজন ব্যক্তি তার ওয়েবসাইটটি করে দিল। আরিফ ওয়েবসাইটটি বুঝে পাওয়ার পর রাকিবকে টাকা পরিশোধ করে দিল।
উপরের উদাহরণে, আরিফ আউটসোর্সিং করেছেন এবং রাকিব ফ্রিল্যান্সিং করেছেন আর যে স্থানে ওয়েবসাইট তৈরি করার ঘোষনা দিল সেটা হল মার্কেটপ্লেস।
ফ্রিল্যান্সিং এ সময় ও স্থানের বাঁধাধরা নিয়ম না থাকায় প্রত্যেকেই তার দক্ষতা অনযায়ী স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। দিন দিন ফ্রিল্যান্সিং পেশার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য অবশ্যই কোন একটি নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ হতে হবে। বর্তমানে, তরুন-তরুণীদের দক্ষতা অর্জন ছাড়াই ফ্রিল্যান্সিং করার চেষ্টা করছে যার ফলে একদিকে যেমন মার্কেটপ্লেসগুলোর ক্ষতি হচ্ছে অপরদিকে তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে।
ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্ষেত্রসমূহ: ফ্রিল্যান্সিং এ কাজ করার প্রচুর সেক্টর রয়েছে। কয়েকটি জনপ্রিয় সেক্টর: ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, মার্কেটিং ইত্যাদি।
শিক্ষা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পাঠদানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিদেশে গিয়ে সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়াশোনার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে। কারণ, বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগই উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সাধ্য থাকে না। কারণ সেসব দেশে থাকা-খাওয়াসহ পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অনেক ব্যয়বহুল। দূরশিক্ষণ বা ডিসটেন্স লার্নিং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিজ দেশে বসেই পড়ালেখা করতে পারে। ডিসটেন্স লার্নিং বা দূরশিক্ষণ হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যেখানে ঘরে বসেই স্বনামধন্য শিক্ষকদের পাঠদান গ্রহণ করা যায়। সারা বিশ্বের স্নাতকদের এক-তৃতীয়াংশ কোনো না কোনো ভাবে দূরশিক্ষণের সাথে জড়িত।
10minuteschool.com, shikkhok.org, khanacademy.org ওয়েবসাইটগুলোর মাধ্যমে ঘরে বসেই স্বনামধন্য শিক্ষকদের ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে। এখন, অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সার্টিফিকেটও দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে এখন ঘরে বসেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ গ্রহণ করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, রোগীর সাথে ভিডিও শেয়ারিং এর মাধ্যমে আলোচনা করে ডাক্তার রোগীর ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। ভৌগলিক দূরত্বে অবস্থান করে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সাহায্যে রোগীকে স্বাস্থ্য সেবা দেওয়াকে টেলিমিডিসিন বলে।
গবেষণা
বর্তমানে ঘরে বসেই গবেষনা করা সম্ভব। মানুষ এখন সাহিত্য, শিল্প বা সমাজবিজ্ঞান অথবা গণিত, চিকিৎসা, বিজ্ঞান, যা নিয়েই গবেষণা করুক না কেন, তারা কম্পিউটার, ইন্টারনেটসহ তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া সেই গবেষণার কথা চিন্তাই করতে পারে না। গুগল(Google), উইকিপিডিয়া(Wikipedia) ওয়েবসাইট গুলোর মাধ্যমে ঘরে বসেই যেকোনো বিষয়ের উপর জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব।
অফিস
তথ্য ও যোগাযোগের মাধ্যমে অফিসের বিভিন্ন কাজ অনেক সহজেই সম্পন্ন করা যায়। অফিস অটোমেশন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে অফিসের সার্বিক কার্যক্রম যেমন: ডকুমেন্ট তৈরি করা, সংরক্ষণ, হিসাব ইত্যাদি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা যায়। এ প্রক্রিয়ায় অফিসের স্বচ্ছতা, কাজের দক্ষতা ও নিরাপত্তা বাড়ে।
বাসস্থান
সাধারণভাবে, আমরা যেখানে বাস করি সেটাই বাসস্থান। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যাণে তৈরি হচ্ছে স্মার্ট হোম। স্মার্ট হোম স্মার্ট হোম হচ্ছে এমন একটি বাসস্থান য়েখানে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে বাড়ির প্রয়োজনীয় সিস্টেম(যেমন: ফ্যান, লাইট, সিকিউরিটি ইত্যাদি) কে নিয়ন্ত্রন করা যায়। স্মার্ট হোম তখনই হয়ে উঠবে যখন দালানে স্মার্ট যন্ত্র ব্যবহার করা হবে। যেগুলো ধোঁয়া, আগুন শনাক্ত করতে পারবে, নির্দিষ্ট জায়গা বা মানুষের কাছে তথ্য পাঠাতে পারবে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগুন নেভাতেও পারবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য
ব্যবসা বানিজ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষ্ময়কর ভূমিকা রেখেছে। সাধারণত, মানুষ কোন পন্য কেনার জন্য বাজারে যেতে হয়। ই-কমার্স বাজারে গিয়ে পন্য ক্রয় বিক্রয়ের ধারণাটি বদলে দিয়েছে। ই-কমার্স এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক্স কমার্স যার মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ঘরে বসেই পণ্য ক্রয় বিক্রয় করা যায়। পন্য ক্রয়ের পর একজন ব্যক্তি অনলাইনেই মূল্য পরিশোধ করতে পারেন। অনলাইনে মূল্য পরিশোধের প্রক্রিয়াকে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম বলা হয়। যেমন: পেপাল, পায়োনিয়ার, স্ক্রিল, নেটেলার ইত্যাদি পেমেন্ট মেথডের মাধ্যমে ঘরে বসেই মূল্য পরিশোধ করা যায়। বাংলাদেশে ঘরে বসে মূল্য পরিশোধের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং। জনপ্রিয় কিছু মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্যে রয়েছে: বিকাশ, রকেট, নগদ ইত্যাদি। ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে অর্থ পাঠানো। ইলেক্ট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের আরেকটি জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ATM যার পূর্ণরূপ Automatic Teller Machine.
পন্য লেনদেনের ধরণ অনুযায়ী ই-কমার্স চার প্রকার:-
B2B (Business to Business)
B2C (Business to Consumer)
C2B (Consumer to Business)
C2C (Consumer to Consumer)
ই-কমার্সের সুবিধা১। ঘরে বসেই পন্য ক্রয়-বিক্রয় করা যায়।
২। যাতায়াত খরচের প্রয়োজন হয় না।
৩। অফিস ভাড়া না করে বাসায় বসেও ব্যবসা করা যায় ফলে ব্যবসা শুরু করতে খরচ কম হয়।
৪। কুরিয়ার সেবার মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্তে পন্য সরবারাহ করা যায়।
ই-কমার্সের অসুবিধা১। অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সমস্যা হয়ে থাকে।
২। ই-কমার্স বাস্তবায়নে দক্ষ লোক প্রয়োজন।
৩। পন্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতারণার সম্ভবনা থাকে।
সংবাদ
খবর জানার জানার এখন পত্রিকা কেনার তেমন কোন প্রয়োজন হয় না। ইন্টারনেটের মাধ্যমেই সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে খবর পাওয়া যায়। অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া খবরগুলো প্রকাশিত হয়। তবে, নিউজ পোর্টাল বাছাই করার সময় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ, কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টাল মিথ্যা খবর প্রকাশ করে থাকে। কয়েকটি জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল হচ্ছে: prothomalo.com, jugantor.com, bd-pratidin.com ইত্যাদি।
বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ
তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে এখন মানুষ বহুমুখী বিনোদন উপভোগ করতে পারছে। যেমন: ইউটিউব এর মাধ্যমে যেকোন ধরনের ভিডিও দেখা, স্মার্টফোনগুলোর মাধ্যমে গেইম খেলা ইত্যাদি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমান যুগের খুব জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম, যার মাধ্যমে একে অন্যের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বিশ্বের সকল মানুষকে একে অপরের সাথে যুক্ত করে যোগাযোগের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ফেইসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস ইত্যাদি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। এসব যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর মধ্যে ফেইসবুক সবচেয়ে জনপ্রিয় যেটি মার্ক জুকারবার্গ ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন।
সাংস্কৃতিক বিনিময়
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্লগ, বিনোদন মাধ্যম ইত্যাদির মাধ্যমে বিশ্বের সকল মানুষের একে অপরের সাথে সাংস্কৃতিক বিনিময় করতে সক্ষম। ব্লগ হচ্ছে এক ধরনের ওয়েবসাইট যেখানে কোনো ব্যাক্তি তার নিজস্ব লেখা প্রকাশ করতে পারে। সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সুফলের পাশাপাশি বেশকিছু কুফল রয়েছে।
অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর
তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বই বিশ্বগ্রাম – ব্যাখা কর। [রা. বো-১৯]
বিশ্বগ্রাম হচ্ছে এমন একটি পরিবেশ যেখানে পৃথিবীর সকল মানুষ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত থাকতে পারবে। ফলে, এক অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলের মানুষদের সাহায্য করতে পারবে। বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার জন্য বেশকিছু উপাদান প্রয়োজন এবং প্রতিটি উপাদান তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর। তাই বলা যায়, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বই বিশ্বগ্রাম।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশ্বকে হাতের মুঠোর নিয়ে এসেছে – ব্যাখা কর। [দি. বো-১৯]
বর্তমান যুগকে বলা হয় তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর যুগ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এ যুগের চালিকাশক্তি যা পুরো বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। ফলে, এক অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলের মানুষদের সাহায্য করতে পারবে।
"সংবাদে আজ যে কেউ যেকোনো স্থান থেকে যুক্ত হতে পারে" - ব্যাখা কর। [মাদ্রাসা বোর্ড - ২০১৯]
ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে আজ যে কেউ যেকোনো স্থান থেকে সংবাদে যুক্ত হতে পারে। ভিডিও কনফারেন্সিং হলো একটি অত্যাধুনিক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা যেখানে মনিটর বা পর্দায় অংশগ্রহণকারীরা সভায় অংশগ্রহণ করতে পারে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দূরবর্তী অবস্থান থেকে সভায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বই বিশ্বগ্রাম – ব্যাখা কর। [রা. বো-১৯]
বিশ্বগ্রাম হচ্ছে এমন একটি পরিবেশ যেখানে পৃথিবীর সকল মানুষ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত থাকতে পারবে। ফলে, এক অঞ্চলের মানুষ অন্য অঞ্চলের মানুষদের সাহায্য করতে পারবে। বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার জন্য বেশকিছু উপাদান প্রয়োজন এবং প্রতিটি উপাদান তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর। তাই বলা যায়, তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বই বিশ্বগ্রাম।
“বিশ্বগ্রামের মেরুদণ্ডই কানেক্টিভিটি" - বিশ্লেষণ কর। [দি.বো-১৯]
বিশ্বগ্রামের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কানেক্টিভিটি হচ্ছে বিশ্বগ্রামের মেরুদণ্ড। কানেক্টিভিটি বলতে ইন্টারনেট সংযোগকে বুঝানো হয়। এ উপাদানের মাধ্যমেই ডেটা স্থানান্তর করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলতে কি বুঝ? [ঢা. বো-১৬]
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বর্তমান যুগের খুব জনপ্রিয় একটি প্লাটফর্ম, যার মাধ্যমে একে অন্যের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বিশ্বের সকল মানুষকে একে অপরের সাথে যুক্ত করে যোগাযোগের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ফেইসবুক, টুইটার, গুগল প্লাস ইত্যাদি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম।
ই-কমার্স ব্যবসা বানিজ্যকে সহজ করে দিয়েছে-ব্যাখা [মা.বো-১৮]
ই-কমার্স বাজারে গিয়ে পন্য ক্রয় বিক্রয়ের ধারণাটি বদলে দিয়েছে। ই-কমার্স এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ইলেক্ট্রনিক্স কমার্স যার মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে ঘরে বসেই পণ্য ক্রয় বিক্রয় করা যায়। ফলে, যাতায়াত খরচের প্রয়োজন হয় না। পন্য ক্রয়ের পর একজন ব্যক্তি অনলাইনেই মূল্য পরিশোধ করতে পারেন।
ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি:
প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয়, কিন্তু বাস্তব চেতনা উদ্যোগকারী বিজ্ঞাননির্ভর কল্পনাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বলে। এটি মূলত কম্পিউটার প্রযুক্তি ও সিম্যুলেশন তত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে ত্রিমাত্রিক ইমেজ তৈরি হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কাল্পনিক যেকোনো দৃশ্য দেখা ও শোনা যায়। কতগুলো যন্ত্রের সমন্বয়ে কাল্পনিক ঘটনাগুলো বাস্তবের ন্যায় রূপ দেওয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে: হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে, বডি স্যুট, ডেটা গ্লোভস, চশমা ইত্যাদি।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তিটি খুব বেশী সহজলভ্য না হলেও প্রাত্যহিক জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে বাস্তবে অবস্থান করেও কল্পনাকে ছুঁয়ে দেখা সম্ভব। এখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কিছু প্রয়োগের ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করা হল:-
গাড়ি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ: ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্য গাড়ি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেওয়া যায়। গাড়ি ড্রাইভিং প্রশিক্ষণের জন্য চালককে একটি নির্দিষ্ট আসনে বসতে হয়। চালকের মাথায় একটি হেড মাউন্টেড ডিসপ্লের মাধ্যমে রাস্তার আশে পাশের নমুনা দেখানো হয়।
বিমান প্রশিক্ষণ: ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে কোন ধরনের ঝুঁকি ও দূর্ঘটনা ছাড়াই বিমান প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব। ফ্লাইট সিমুলেশনের মাধ্যমে বিমান চালনার যাবতীয় কৌশল রপ্ত করা যায়।
চিকিৎসা ক্ষেত্র: বিভিন্ন ধরনের জটিল অপারেশন, ডিএনএ পর্যালোচনা, কৃত্রিম অঙ্গ-প্রতঙ্গ সংযোজনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়।
বিনোদন ক্ষেত্র: আধুনিক যুগে বেশকিছু চলচিত্র ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে নির্মাণ করা হচ্ছে।
জাদুঘরে: জাদুঘরে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পাহাড়, গুহা, প্রত্মত্বাত্তিক নিদর্শন ইত্যাদি প্রদর্শন করা যায়। ফলে, দর্শনার্থী বিভিন্ন স্থান সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অসুবিধা
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এর ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
এটি বাস্তবায়ণ ব্যয়বহুল।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষ অতিরিক্ত কল্পনাপ্রবণ হয়ে উঠে। বাস্তবতার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
রোবটিক্স :
রোবটিক্স হচ্ছে প্রযুক্তির এমন একটি শাখা যেখানে রোবটের নকশা ডিজাইন, গঠন, কাজ ও প্রয়োগক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করা হয়। Robot শব্দটি স্লাভিক্স শব্দ Robota থেকে এসেছে যার অর্থ শ্রমিক। রোবট একটি স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র যা কাজের প্রয়োজনে রোবটকে ৩৬০ ডিগ্রী কোণ পর্যন্ত ঘোরানো যায়। রোবটের মাধ্যমে বিপদজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করা হয়। যেমন: ভারি যন্ত্রাংশ উঠানামা, যন্ত্রাংশ সংযোজন, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ, মহাকাশ গবেষণা, চিকিৎসা ও সামরিকক্ষেত্র ইত্যাদি।
রোবোটের বিভিন্ন অংশের নাম: পাওয়ার সিস্টেম, মুভেবল বডি:, সার্কিট, অ্যাকচুয়েটর, প্রোগ্রাম্যাবল ব্রেইন, সেন্সর ইত্যাদি। অ্যাকচুয়েটর হচ্ছে এমন একটি মোটর যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘুরানো যায়।
ক্রায়োসার্জারী:
ক্রায়ো (Cryo) একটি গ্রিক শব্দ যার অর্থ হচ্ছে "বরফের মত ঠাণ্ডা" বা "খুবই ঠাণ্ডা" এবং সার্জারি (Surgery) শব্দের অর্থ হচ্ছে "হাতের কাজ"। অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় শরীরের অস্বাভাবিক টিস্যুকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়ার নামই হচ্ছে ক্রায়োসার্জারি।
নিম্ন তাপমাত্রায় রোগ আক্রান্ত টিস্যুতে নাইট্রোজেন / আর্গন গ্যাস স্প্রে করার জন্য 'ক্রায়োগান' যন্ত্রটি ব্যবহার করতে হয় এবং শরীরের অভ্যন্তরে সার্জারির জন্য 'ক্রায়োপ্রোব' যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয়। এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে তাপমাত্রা -৪১ থেকে -১৯৬ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড তাপমাত্রা হওয়ায় ঔ স্থানের অক্সিজেন ও রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে রোগাক্রান্ত কোষগুলো ক্ষতিসাধন হয়। এটি ন্যূনতম ধকল সহি্ষ্ণু শল্যচিকিৎসা পদ্ধতি। এ চিকিৎসা পদ্ধতিতে রক্তপাতহীন অপারেশন সম্ভব। ত্বকের ক্যান্সার, ত্বকের টিউমার, যকৃত ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ক্রায়োসার্জারি ব্যবহার করা হয়। এ চিকিৎসা পদ্ধতির জটিল কোন পাশ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
পরবর্তী পর্বে যা যা আলোচনা করা হবে:
বায়োমেট্রিক্স
বায়োইনফরমেট্রিক্স
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং
ন্যানো টেকনোলজি
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারে নৈতিকতা